1. jasemruman@gmail.com : Mohammad Jasemuddin : Mohammad Jasemuddin
  2. bankersdorpon@gmail.com : Anis Munshi : Anis Munshi
  3. azizulhoquedc330@gmail.com : Azizul Hoque : Azizul Hoque
  4. anis.buet2009@gmail.com : superadmin :
  5. shamimbasic2012@gmail.com : Munshi Mohammad Shamim Ahmed : Munshi Mohammad Shamim Ahmed
  6. abusolaiman1984@gmail.com : Abu Solaiman : Abu Solaiman
  7. ferdauszinnat@gmail.com : Zinnat Ferdaus : Zinnat Ferdaus

প্রকাশ পেল ” রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন” বই এর ২য় খন্ড

  • আপডেট টাইম : Tuesday, March 10, 2020
  • 564 বার পঠিত

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এর সদ্য সাবেক ডিজিএম জালাল উদদীন মাহমুদ এর আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ ” রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন” এর ২য় খন্ড অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ এ প্রকাশ করে বর্ষা দুপুর প্রকাশনী। প্রকাশের পর থেকেই জনপ্রিয়তার কারনে বই এর সবগুলো কপি বিক্রি হয়ে যায়। বর্তমানে বইটির ২য় মূদ্রণ চলছে। এরই মধ্য বইটি পড়ে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন অগ্রণী ব্যাংক এর মোহাম্মদ নাজমুল হুদা রবিন।

জালাল স্যার এর ” রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন ( দ্বিতীয় খন্ড) ও আমার ভাবনা”

রঙে এ ভরা আমাদের জীবন হওয়ায় সেখানে যেমন লাল রঙ থাকে, থাকে নীলও। আরও থাকে সাদা, কালো সহ অনেক রঙ। রঙের এই পরিমিত মিশ্রন যাদের জীবন কে দান করেছে অমরত্ব সেই মহান ব্যক্তিত্বদের তুলে ধরা হয়েছে স্যারের “রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন ’’ (দ্বিতীয় খন্ড) এ অনেকটা অংশ জুড়ে। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসহ নানা বিষয় আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন অত্যন্ত সুন্দর ও সহজভাবে-যা সকলের কাছে বোধ্যগম্য ।

০১. বইটির প্রথমেই পাবো গনমুখী ব্যাংকার লুৎফর রহমান সরকার এর ব্যাংকিং সেক্টরে তার অনবদ্য অবদানের কথা। বগুড়ার কৃতি সন্তান ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই ছাত্র জনাব লুৎফর রহমান সরকার ১৯৮৩ সালে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ষষ্ঠ গর্ভনরের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। বইটি পড়ে যানা যাবে “সীমিত আয়ের মানুষের কথা বিবেচনায় এনে জনাব লুৎফর রহমান সরকার ই প্রথম বাংলাদেশে ব্যাংকিং প্রোডাক্ট হিসাবে মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প, মাসিক মুনাফা প্রকল্প, দ্বিগুন বৃদ্ধি আমানত প্রকল্পসমুহ প্রচলন করেন।’’ স্যারের উদ্ভাবিত ডিপিএস কল্পনাতীত ভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল সেইসময়ে। বইটি পড়ে জানা যায় জনাব লুৎফর রহমান সরকার হাবিব ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও প্রাইম ব্যাংক লিঃ এর প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেছেন । ব্যাংকারের এক পা সবসময় জেলখানায় দিয়ে রাখতে হয় – এই উক্তিটি যে স্যারের, বইটি না পড়লে তা জানতে পারতাম না। তিনি আরও বলতেন দিনের শেষ মুহুর্তে বা তাড়াহুড়ার মধ্যে ব্যাংকারদের কোন কিছু অনুমোদন করতে নাই। যদিও কর্মজীবনের শেষ প্রান্তে এসে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাকে জেলকাটতে হয়েছিল তবু অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি কখনো। ১৯৮৩ সাল পর এই মহান ব্যাক্তিটি কে প্রথমবারের মতো বিস্মৃতির আড়াল হতে আমাদের সামনে নিয়ে আসেন তারই যোগ্য উত্তরসূরী আমাদের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম আমাদের অগ্রণী ব্যাংক ভবনের ৫ম তলায় ‘এল আর সরকার এক্সিকিউটিভ ফ্লোর’ নামকরণের মাধ্যমে ।

০২. বইটিতে অগ্রণী ব্যাংক ডেমাজানী শাখা , করতোয়া নদী, মহাস্থানগড়, স্যারের ১ বছরের সিনিয়র রফিক কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহাভারতে আছে “তিন দিন উপবাসের পর পবিত্র করতোয়া নদীতে ভ্রমন করলে ঘোড়া বলিদানের সমান পূন্য হয়।” ১৭৮৭ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় তিস্তার সাথে করোতোয়া বিচ্ছিন্ন হয় বর্তমানে উত্তরবঙ্গে ৫ টি করোতোয়া নদী। বইটিতে ৬ টি ঋতুকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বইটিতে ছোটবেলায় কুড়ে পাওয়া একটি পাকা আমের মূল্য সন্তুষ্টির মূল্যমানে এখনকার ৩/৪ টি ইনসেনটিভ বোনাসের চেয়ে বেশী – বলতে চেয়ে উত্তরবঙ্গের ফল আম ও বৈশাখ মাস এর প্রকৃতি তুলে ধরা হয়েছে ।

০৩. আমরা সবসময় ই প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বসদের সমালোচনা করি । দ্বিতীয় কর্মকর্তা হলে ম্যানজারের , ডিজিএম হলে জিএম স্যারদের একহাত নিতে চাই । জালাল স্যার ডেমাজানী শাখায় দ্বিতীয় কর্মকর্তা হতে ম্যানেজার হওয়ার পর অনুধাবন করেছিলেন দ্বিতীয় কর্মকর্তা হিসেবে তার আরো দ্বায়িত্বশীল হয়ে কাজ করা উচিত ছিল । একটা বিষয় এখানে পরিষ্কার ছিল-ব্যাংকের যে কোন পজিশন এ থেকে দ্বায়িত্ববান হয়ে দ্বায়িত্ব পালন করা জরুরী ।

০৪. বইটিতে লিডার আর ম্যানেজার এর তফাত বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। জোনাল হেড স্যার জালাল স্যারকে ম্যানেজার এর দায়িত্ব দেওয়ার পর প্রাথমিক আলোচনাতে ম্যানেজার এর লিডারশীপ থাকতে হবে এমন অনেক বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে যা ম্যানেজমেন্ট এর ছাত্ররা পড়তে পারেন। ম্যানেজার চলে অথরিটির বলে আর লিডার চলে গুডউইল বলে। ম্যানেজার এর থাকে সার্ব অডিনেট আর লিডারের থাকে ফলোয়ার। ম্যানেজার সবসময় নিজে ক্রেডিট নিতে চায় আর লিডার সাথের সবাইকে ক্রেডিট দিতে চায়। লিডার কে সৎ ও কৌশলী হতে হবে। গর্বের কথা বহুবচন ও ভাববাচ্যে বলতে হয়। এমন অনেক বিষয় উদাহারনসহ সহজ ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বইটিতে।

০৫. স্যার শক্তিমান অভিনেতা না হলেও নাট্যকার মামুনুর রশীদ এর “ওরা আসে বলেই” নাটকে ভাল অভিনয় করার সাহস দেখিয়েছেন যেখানে জোনাল হেড স্যার “মেথর’’ এর ভূমিকায় আর স্যার “স্যানেটারি ইন্সপ্যাক্টর’’ এর ভূমিকায় ছিলেন। নাটকের চরিত্রের কারনেই জোনাল হেডকে রিহার্সেলের সময় লাথি মারতে হয়েছিল, গলায় গামছা ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়ার মতো কাজ করতে হয়েছিল। পেশাদার অভিনেতা না হওয়ার কারনে জোনাল হেড স্যার খুবই চোট পেয়েছিল হ্যাচকা টানের কারনে। যদিও এ বিষয়ে বসের পক্ষ নিয়ে সবাই স্যারকে দায়ী করেছিলেন কিন্তু জোনাল হেড স্যার বিষয়টিকে সহজ করার জন্য যে তৎপরতা দেখিয়েছেন-তা মূলত সাবঅর্ডিনেটের প্রতি বসের যে মহাত্ম্য তা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে ।

০৬. বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে একজন সরকারী আমলাও যে ভালো ব্যাংকার হতে পারে- মোহাম্মদ হোসেন ১৯৮৩ সালে অগ্রণী ব্যাংকে এমডি হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে প্রমাণ করেন। বেশী কৃষিঋণ রয়েছে এমন শাখাতে হেড অফিসের কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে ঋণ আদায় কে তরান্বিত করেছেন। মোহাম্মদ হোসেন স্যার কৃষি ঋণের উপর বই লিখে সব শাখাতে সরবারাহের মাধ্যমে কৃষিঋণকে সহজীকরন করে তুলেন। এমডি স্যার সরাসরি গ্রামীন শাখা পরিদর্শনে গেলে কিছু সমস্যা চোখে পড়লে ম্যানেজারদের ট্রান্সফার করার মাধ্যমে আতঙ্ক তৈরী করেছেন-এমন বিষয়ই ফুটে উঠেছে বইটির অনেক অংশে। স্থায়ী সম্পদ বাড়ানোর দিকে মনোযোগী এই মহান এমডি শাহবাগে, মতিঝিলে জমি কেনার পাশাপাশি ব্যাংকিং ম্যাকানিজমে পারদর্শী ছিলেন। বাংলাদেশে মার্জিন বিহীন এলসি খোলার মাধ্যমে শুধুমাত্র মাষ্টার এলসি লিয়েন রেখে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার পাওনিয়ার হিসেবে অগ্রণীকে এগিয়ে দিয়েছেলেন। ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি বাংলাদেশে অগ্রণীতেই প্রথম হয়-বইটি পড়ে তাই গর্ববোধ করছি একজন অগ্রণীয়ান হয়ে যা মোহাম্মদ হোসেন স্যার এর মেয়াদকালেই শুরু হয়েছে। যে দেশে গুনের সমাদর নেই সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না-এমনটাই বিশ^াস করেন আমাদের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম। আর এ কারনেই স্যার “অগ্রণী ব্যাংক মোহাম্মদ আলী ভবন’’ নামকরন করেন যা আমাদের কাছে গর্বের বিষয়।

০৭. মোহাম্মদ আলী স্যার মাদলা শাখার ম্যানেজার দুলাল সাহেবকে পটুয়াখালীতে বদলী করেছিলেন। দুলাল সাহেব পরবর্তীতে এক তদবীরকারী স্যার কে উত্তরবঙ্গের মজাদার আমের বিনিময়ে যে বদলী ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন-তা তুলে ধরার মাধ্যমে মুলত উত্তরবঙ্গের সব আমের পরিচয় তুলে ধরেছেন। তদবীরকারী স্যার দুলাল সাহেবকে বলে তার মেয়ের ল্যাংড়া খুব পছন্দ, নাতনি ফজলি, বউ হিমসাগর, বউয়ের বোন হিমসাগর খেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যদিও পরে তার বদলী অর্ডারটি পিডি হতে নিজেই করতে সক্ষম হয় তবুও তদবীরকারী চরিত্রটি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।

০৮.বইটি পড়ে জানতে পারলাম পূর্নবয়স্ক নারীরা বছরে গড়ে ৬৪ বার কাঁদে আর পুরুষেরা ১৭ বার কাঁদে।

০৯.আরও ভাল লাগল একটা গল্প। এক কারখানার সুপারভাইজার বিয়ে করার পর কিছু সাহায্য চেয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখলে কর্তৃপক্ষ জানায় “যেহেতু দূর্ঘটনা কারখানার বাহিরে ঘটেছে তাই সহযোগিতা করা যাচ্ছেনা ’’। এই গল্পটা স্যার জানত বলেই ডেমাজানী শাখাতে থাকাকালীন সময়ে কাউকে না জানিয়ে বিবাহের কাজটা সম্পন্ন করেন তবে বিবাহের বিষয়টা আরো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যেত।

১০.তবে বইটির শেষ অংশ পড়ে আমি এক ধরনের বেদনার আওয়াজ শুনতে পাই। যেখানে স্যার লিখেন “যেখানেই যাই মনে হয় আমি অনাহুত, আমি যেন অনিমন্ত্রিত, সর্বস্থানে অযথাচিত, কখনো কখনো অপত্যাশিত’’। স্যারের এই কথার পর আমারও স্যারকে জীবনানন্দের ভাষায় বলতে ইচ্ছে হচ্ছে “কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে” তেমই আমাদের এই প্রিয় স্যার সব লাল রঙের পর একটু নীল রং ঢেলে দিলেন। হয়ত এতেই জীবন হয় আরো সুন্দর।

পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও পোস্ট
©2019 to till today at bankersdarpon.com, All rights reserved.
Site Customized By NewsTech.Com