করোনাকালে জরুরী সেবায় নিয়োজিত কয়েকটি খাতের অন্যতম ব্যাংকিং খাতের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ দেশের অর্থনৈতিক গতি সচল রাখার জন্য ব্যাংকাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মার্চ, ২০২০ থেকে এখনো দেশের জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। সারাদেশ যখন করোনা নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত সেই সময় ব্যাংকাররা জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে এবং তারা সারা দেশের গ্রাহকের টাকা প্রয়োজনমত গচ্ছিত রাখছে ও প্রয়োজনমত সরবরাহ করছে। শুধু তাই নয় তারা দক্ষতার সাথে শিল্প-ব্যবসা-কৃষিখাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করে চলেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় কয়েক কোটি ভাতা-ভোগীদের সময়মত তাদের ভাতা প্রদান করেছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল রাখাসহ খাদ্য উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন ও ব্যবসা ঠিক রাখার জন্য সকল প্রকার ঋণ প্রদান কার্যক্রম চালু রেখেছে। সরকারের প্রধান আয়ের উৎস ট্রেজারী চালান-ভ্যাটের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা করছে। পেনশনহোল্ডারদের টাকা পরিশোধ করছে। বিদেশে কর্মরতদের পাঠানো টাকা সময়মত তাদের স্বজনের কাছে পৌছে দিচ্ছে। দেশের এই দূর্যোগকালীন সময় দেশের মানুষদের সেবা দিতে পেরে এবং তাদের পাশে থাকতে পেরে ব্যাংকাররা গর্বিত।
দেশের এই ক্রান্তিকালে ব্যাংকাররা যে আন্তরিকতার সাথে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে তার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে দেশের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যখন নাজুক অবস্থা, দেশের জিডিপি গ্রোথ কমে যাচ্ছে সেই সময় দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে অধিকাংশ ব্যাংকই উল্লেখযোগ্য পরিমান মুনাফা করেছে এবং তার সিংহভাগ কর্পোরেট ট্যাক্স হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করেছে। সরকারী ব্যাংক গুলো তো তাদের লাভের প্রায় সব টাকাই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করেছে।
কিন্তু করোনাকালে এসব সার্ভিস দিতে গিয়ে ব্যাংকার ও তার পরিবারের সদস্যরা ব্যাপকভাবে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে ৬১টি ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৮৩ হাজার। এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২২৪১৪ জন ব্যাংকার (পরিবারের সদস্য বাদে) অর্থাৎ সারা দেশে কর্মরত মোট জনবলের ১২% এবং এসময় মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ১২৯ জন ব্যাংকার। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যাংকারদের পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
করোনা মহামারীর শুরুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর ১৭/২০২০ এবং বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর ১৮/২০২০ এর মাধ্যমে করোনাকালে সাধারণ ছুটির সময় অফিসে আসা ব্যাংকারদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত ব্যাংকারদের চিকিৎসা বাবদ সর্বোচ্চ ১০.০০ লক্ষ টাকা এবং আক্রান্ত ব্যাংকারদের মৃত্যু হলে সর্বোচ্চ ৫০.০০ লক্ষ টাকা বিশেষ আর্থিক অনুদান দেয়ার নির্দেশ দেয়াসহ আরো কিছু সুবিধা দেয়া হয়।
কিন্তু সম্প্রতি বিআরপিডি সার্কুলার ২৪/২০২১ এর মাধ্যমে শুধুমাত্র মৃত্যুকালীন সর্বোচ্চ ৫০.০০ লক্ষ টাকা প্রদানের বিধান রেখে অন্যান্য সুবিধা রহিত করা হয়। ফলে ব্যাংকাররা হতাশ হয়ে পড়েছে।
ব্যাংকাররা শুধুমাত্র করোনাকালীন সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে না। ভবিষ্যতে করোনা পরবর্তী দেশের অর্থনৈতিক পুর্নগঠনে প্রধান ভূমিকা রাখবে ব্যাংকাররাই। তাই ব্যাংকারদের অভিভাবক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ব্যাংকিং ডিভিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংক যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে গৃহীত সুবিধাদি বহাল রাখেন। এছাড়াও ব্যাংকারদের আরো কিছু সুবিধা দিলে ব্যাংকাররা দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে আরো বেশী অনুপ্রাণিত হবে, যেমন-
১। করোনাকালীন সময় সশরীরে অফিস করা ব্যাংকারদের ঝুঁকি ভাতা প্রদান।
২। ব্যাংকারদের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে তাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দ্রæত প্রদান।
৩। পূর্বের ন্যয় করোনায় আক্রান্ত ব্যাংকারদের চিকিৎসা খরচ প্রদান।
৪। করোনার মধ্যে দায়িত্বপালনরত ব্যাংকার ও তাদের পরিবারের সদস্যদেও করোনা টেস্ট ও চিকিৎসায় অগ্রাধিকার প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা।
৫। ব্যাংকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সহায়তা প্রদান।
৬। করোনায় আক্রান্ত ব্যাংকারদের চিকিৎসার জন্য প্রত্যেক ব্যাংকে একটি সেল গঠন।
৭। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক এবং বেসরকারী ব্যাংকের জন্য দুটি পৃথক আধুনিক হাসপাতাল তৈরী।
৮। ব্যাংকারদের কল্যাণের জন্য ব্যাংকার’স ফাউন্ডেশন গঠন।
৯। সকল ব্যাংকাদের সমন্নয়ের জন্য সবাইকে নিয়ে একটি ব্যাংকার’স ক্লাব গঠন।
এস, এম, লুৎফর রহমান
এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
Leave a Reply