ন্যাশনাল কার্ড স্কিম ‘টাকা পে’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল বুধবার (নভেম্বর ০১) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এই ডেবিট কার্ড উদ্বোধন করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে চালু হচ্ছে ‘টাকা পে’ কার্ড। তবে সেবাটি মিলবে আরও কয়েক দিন পর থেকে। এটি হবে ভিসা, মাস্টারকার্ড ও অ্যামেক্সের মতো আন্তর্জাতিক কার্ড সেবার একটি স্থানীয় বিকল্প। এই সেবা পুরোপুরি দেশীয় মধ্যস্থতায় চলবে, তাই এতে খরচও কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক, বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক টাকা পে কার্ড সেবা চালু করছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ভিসা, মাস্টারকার্ড ও অ্যামেক্সের মতো আন্তর্জাতিক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম আছে এবং তাদের কার্ড সারা বিশ্বে গ্রহণযোগ্য। লেনদেন মধ্যস্থতা করার নিজস্ব ব্যবস্থাও তাদের আছে। তবে টাকা পে কার্ডের লেনদেন নিষ্পত্তি হবে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশ (এনপিএসবি)–এর মাধ্যমে। এখন এক ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা তুলতে গেলে এই এনপিএসবি সুবিধা ব্যবহার করেন।
আপাতত দেশের মধ্যে এই সেবা চালু হবে। ভবিষ্যতে টাকা পে কার্ড ভারতেও ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, অন্য ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে টাকা পে কার্ড চালু করবে। শুরু থেকেই দেশের সব এটিএম, পয়েন্টস অব সেলস ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এই কার্ড ব্যবহার করা যাবে। শুরুতে এটি ডেবিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করা গেলেও ভবিষ্যতে টাকা পে ক্রেডিট কার্ডও আসবে। এই কার্ডের নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হচ্ছে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ। তবে এখন সব ব্যাংকের কার্ডেই বাড়তি নিরাপত্তা সংবলিত নতুন ইএমভি প্রযুক্তি চালু হয়েছে। ধীরে ধীরে টাকা পে কার্ডও ইএমভি প্রযুক্তি আনা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে ব্যাংকগুলো পাইলট ভিত্তিতে টাকা পে কার্ড চালু করবে। ফ্রান্সের পরামর্শ প্রতিষ্ঠান ‘ফাইম’ কার্ডটি তৈরি করেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমে আসবে। কারণ, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সেবা মাশুল বাবদ অনেক অর্থ খরচ করতে হয়।
গতকাল সকাল সাড়ে নয়টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্ড উদ্বোধন করেন। টাকা পে কার্ড উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা খুব আনন্দিত। টাকা পে কার্ড এটা দেশের জন্য একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
টাকা পে কার্ড বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, এখন আমাদের পরনির্ভরশীলতা কমে যাবে। আমরা এখন যেসব কার্ড ব্যবহার করিয়ে এগুলি বিদেশি সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। সেখানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। এই কার্ডে এখন আর বিদেশি মুদ্রা খরচ করা লাগবে না।
ভবিষ্যতে টাকা পে কার্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন চালু করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, হার্ড কারেন্সি ( কাগজের টাকা) ওপর আমাদের যেন নির্ভরশীল থাকতে না হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল আজকে আমরা সেটা করতে পেরেছি।
ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠার সুবিধা কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে যখন ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হবে তখন দুর্নীতিও হ্রাস পাবে, দেশের উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে, রাজস্ব আয় সহজ হবে।
ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেক্ষেত্রে দেশের সকল মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে হবে।
ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্ব অসীম। কাজেই ব্যাংকিং খাতে সেবাটা যাতে আরো সুষ্ঠ হয়, সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সুরক্ষিত হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
ন্যাশনাল কার্ড স্কিম ‘টাকা পে’র নিরাপত্তা, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন তাদের অফিস থেকে টাকা পে কার্ডের ব্যবহার, এর মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট, এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করে দেখান। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে তা প্রত্যক্ষ করেন।
এরপর সোনালী ব্যাংকের দুজন মুক্তিযোদ্ধা গ্রাহক টাকা পে কার্ড দিয়ে সিটি ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করেন। পাশাপাশি ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ড দিয়ে ই-কমার্স লেনদেনের পরিকল্পনা আছে বলে জানা গেছে।
গত ১৮ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছিলেন, চিকিৎসা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেকে ভারতে যান। এ জন্য মার্কিন ডলার কিনে ভারতে গিয়ে রুপিতে রূপান্তর করতে হয়। এতে ভ্রমণকারীকে প্রায়ই বিনিময় হারে লোকসানে পড়তে হয়। এ অবস্থা উত্তরণে টাকা পে নামের ডেবিট কার্ড আনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে মানুষ টাকা বা রুপি উত্তোলন করতে পারবেন। এটি ভারতে ভ্রমণকারী বাংলাদেশিরা অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।
Leave a Reply