ব্যাংকিং- এ থ্যাংকলেস জব!
করোনা ইস্যুতে দেশ এখন সংকটাপন্ন। বরাবরের মতোই দেশের জরুরি মুহূর্তে বসে নেই ব্যাংকাররা। ডাক্তার, পুলিশ, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংকাররা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও কাজ করে যাচ্ছে। অথচ, করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকলেও ব্যাংকারদের নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই, দেশের মূলধারার মিডিয়ায় নেই কোন আলোচনা, নেই জনগণের তরফে নূন্যতম কৃতজ্ঞতা। অথচ, এই ব্যাংকারই নাকি দেশে মূল চালিকা শক্তি! ঈদে সবার ছুটি হয়েছে কিন্তু জনগনের যেহেতু টাকা লাগবে, পোশাক শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে, সুতরাং, শনিবার হলেও ব্যাংক খোলা রাখতে হবে। সামনে ইলেকশন, প্রার্থীরা অন্যান্য কর্মদিনে ব্যাংকে ক্লিয়ারেন্স এর জন্য আসার সময় পাননি; সুতরাং, সাপ্তাহিক ছুটিতে হলেও ব্যাংক খোলা রাখতে হবে! করোনা ইস্যুতে বিশ্ব স্থবির। বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ আজ গৃহবন্দী। কিন্তু ব্যাংকাদের সে সুযোগ আছে কী? বিভিন্ন সরকারি কার্যক্রম সেটা হোক স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়, IEDCR বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয়- এসব চলতে তো অর্থের দরকার, জরুরি বেসরকারি কর্মকাণ্ড চলতেও তো অর্থ লাগে। এমনকি যে ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত বা সাসপেক্ট তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করতেও অর্থ অবশ্যই দরকার! তাহলে ব্যাংক খোলা না রেখে উপায় কী! তা যৌক্তিকও বটে। কিন্তু যে করোনা সাসপেক্ট ব্যাংকে টাকা উঠাতে এলো, যে প্রবাসী বহুদিন পর দেশে এসে তার কিছু ব্যাংক বিষয়ক কাজ এগিয়ে রাখতে ব্যাংকে এলো বা যে অর্থ একজন ব্যাংক কর্মকর্তা সারাদিন গুনছে তার মাধ্যমে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হতে পারে না? মাঝেমাঝে ক্লায়েন্টরা এমনভাবে মুখের সন্মুখে এসে কথা বলে যে প্রয়োজনীয় ৩ ফুট দূরত্বের স্থলে ১ ফিট দূরত্বও বজায় রাখা সম্ভব হয় না। হাঁচিকাশির শিষ্টাচার প্রত্যাশা করা দিবা স্বপ্ন। এখানে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত সকল ধরনের মানুষের বিচরণ। অথচ, এই উচ্চঝুঁকি থাকা সত্বেও ব্যাংকারদের PPE নিয়ে কারোও কোন উদ্দ্যোগ বা উদ্বেগ নেই! বরং, কয়দিন পূর্বে এক ব্যাংকারের PPE পরিহিত একটি ছবি ভাইরাল হয়ে যায়, যেখানে ব্যাংকারদের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করা হয়! বলা হয় সরকার থেকে এটা প্রদান করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যে। সেটা আদৌ PPE ছিলো নাকি রেইনকোট জাতীয় কিছু ছিলো তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কেন ভাই কোন ব্যাংকার যদি নিজের সেইফটির কথা ভেবে নিজের টাকায় PPE কেনে তাতে আপনাদের এতো জ্বলে কেনো? তাদের সংক্রমণ সম্ভাবনা আপনি অস্বীকার করতে পারেন তাই বলে কী তার সেল্ফ সেফটি গ্রহন করার অধিকার নেই? ব্যাংকারদের কী পরিবার নেই, স্বজন নেই, স্বপ্ন নেই, তাদের কী বেঁচে থাকার অধিকার নেই! গত ২৬ মার্চ কালের কন্ঠ একটি রিপোর্ট করে যার হেড লাইন ছিলো “সোনালী ব্যাংকে পিপিই পরে অফিস করেন কর্মীরা!” যে ছবিটি তারা এই নিউজের সাথে দেয় তার সত্যতা আমি খুঁজে পাইনি। তাহলে এই মিথ্যে সংবাদ আপনারা কেনো দিলেন? জনগনের ইর্শা তৈরি করতে!
এই যে ব্যাংকিং প্রফেশনটার সামাজিক মূল্যায়ন করতে আপনাদের এতো অনীহা অথচ এমন একটি প্রফেশন আপনি দেখাতে পারবেন না যারা ব্যাংকারদের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করে, ব্যাংকারদের চেয়ে বেশি সৎ! ব্যাংকই সম্ভবত এমন একটি কর্মক্ষেত্র যেখানে সেবাগ্রহীতাকে ফেভার দিতে গিয়ে আইনের বাত্যয় ঘটিয়ে ব্যাংকাররা প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপন করে। যাইহোক, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থেই আমাদের প্রত্যেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতেই হবে। এই যে যখন এই লেখাটি আমি লিখছি তখন আমার মতো অনেক ব্যাংকারই হয়তো জানেননা আগামীকাল কিভাবে অফিসে পৌঁছাবেন, কারন গণপরিবহন বন্ধ। আমরা না হয় নিজ ঝুঁকি নিয়ে অফিসে পৌঁছাবোই, ঝুঁকি নিয়ে সেবা দেবোই। কিন্তু আপনারা সহমর্মিতা না জানাতে পারলেন, কৃতজ্ঞতা না জানাতে পারলেন; না জেনে বুঝে ট্রল করবেন না, মিথ্যে প্রপাগাণ্ডা ছড়াবেন না প্লিজ! Stay Home Please.
পরিশেষে, ডাক্তার, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সকল জরুরি সেবাদানকারীদের জন্য PPE নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই। আমরা সবাই ভালো থাকি, দেশ ভালো থাকুক।
লেখকঃ
সুজন প্রামাণিক
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
Leave a Reply