1. jasemruman@gmail.com : Mohammad Jasemuddin : Mohammad Jasemuddin
  2. bankersdorpon@gmail.com : Anis Munshi : Anis Munshi
  3. azizulhoquedc330@gmail.com : Azizul Hoque : Azizul Hoque
  4. anis.buet2009@gmail.com : superadmin :
  5. shamimbasic2012@gmail.com : Munshi Mohammad Shamim Ahmed : Munshi Mohammad Shamim Ahmed
  6. abusolaiman1984@gmail.com : Abu Solaiman : Abu Solaiman
  7. ferdauszinnat@gmail.com : Zinnat Ferdaus : Zinnat Ferdaus

সত্য-সুন্দর ব্যাংকার

  • আপডেট টাইম : Tuesday, November 26, 2019
  • 611 বার পঠিত

প্রশান্তকুমার সাহা (রাইট): ব্যাংকের উৎপত্তির সাথে বিনিময় প্রথা ও অর্থের একটা ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে।  ভোগের সুবিধার জন্য বিনিময় প্রথার প্রবর্তন হয়।  আর বিনিময় প্রথার অসুবিধা দূর করার জন্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে অর্থের প্রচলন শুরু হয়।  যখন থেকে অর্থের প্রচলন শুরু হয় তখন থেকে ক্রমান্বয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সাংগঠনিক রূপ লাভ করে।  তাই বিনিময় প্রথা, অর্থ ও ব্যাংকের মধ্যে একটা পারস্পরিক ক্রমধারা বজায় রয়েছে যা একে একে আবির্ভূত হয়ে বর্তমান ব্যাংকিং অবস্থায় রূপ ধারণ করেছে।

ব্যাংক আধুনিক সভ্যতার এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ।  বর্তমানে একজন মানুষের পক্ষে তার দৈনন্দিন জীবন অপূর্ণ থেকে যাবে ব্যাংক না থাকলে।  ব্যাংক শব্দটি এখন আর একটি শব্দেই সীমাবদ্ধ নেই; ব্যাংক, ব্যাংকিং ও ব্যাংকার এই তিনটি শব্দই বর্তমানে এক কথায় ব্যাংক নামেই পরিচিত।
অর্থের গতিশীলতা বৃদ্ধি ও নগদ লেনদেনের ঝামেলা হ্রাস করাই হলো ব্যাংকের কাজ।  আর ব্যাংক যেসব কার্যাবলি সম্পাদন করে (যেমন – অর্থ জমা গ্রহন ও ঋণ প্রদান) থাকে তার সামগ্রিক রূপকেই ব্যাংকিং বলে।  আর ব্যাংকার বলতে বুঝায় ব্যাংকিং কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ যারা এই সমগ্র সিস্টেমকে স্বচ্ছ ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করে অর্থাৎ সচল রাখে।
একজন ব্যাংকারের পেশা খুব কঠিন একটি পেশা।  বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে ব্যাংককে দেশের আর্থ-সামাজিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে বলা হয় সেখানে এই কাজ আরো কঠিন হয়ে যায়।
অতীতে ব্যাংকগুলি আমানতকারীদের অর্থের রক্ষাকারী ছিল, যেগুলি তাদের যত্ন সহকারে ভালো মন্দ বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ করতে হয়েছিল, যাতে এটি নিরাপদ থাকতে পারে এবং আমানতকারীদের ফিরিয়ে দেওয়া হত, যখন তারা এটি ফেরত চাইতো।  যদি কোনও ব্যাংক তাৎক্ষণিক অর্থ প্রদান করতে ব্যর্থ হয়, তবে মানুষের আত্মবিশ্বাস কেঁপে উঠত এবং বেশিরভাগ গ্রাহকই ব্যাংকের প্রতি আস্থা হারিয়ে ব্যাংক থেকে তাদের অর্থ উত্তোলন করার জন্য ভিড় জমাতেন।
তবে এগুলি এখন অতীতের বিষয়। আমানতকারীগণের অর্থ এখন নিরাপদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের অর্থ ফেরতের গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তবুও ব্যাংকারকে অবশ্যই আমানতগুলি যত্ন সহকারে পরিচালনা করতে হবে যাতে লোকেরা তার দক্ষ পরিচালনা এবং ব্যাংকের সাথে আমানত বৃদ্ধিতে মুগ্ধ হয়।  এই পরিণতিটি বিবেচনা করে, ব্যাংকারকে আরো অধিক আমানত সংগ্রহের জন্য নতুন ও আকর্ষনীয় স্কিম প্রচলন করা উচিৎ।  বর্তমানে তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার এবং অসংখ্য ব্যাংকের মধ্যে সাফল্য অর্জন করতে হলে ব্যাংকারকে অবশ্যই পেশাদার হতে হবে।
আমানত সংগ্রহ মুদ্রার একমাত্র দিক; এর অন্য দিকটি হলো ঋণ প্রদানের হার।  তাই ঋণ দেওয়ার সময় ব্যাংকারকে কৌশলি হতে হবে যাতে ব্যাংকের কোনো ক্ষতি না হয়।  আজ ব্যাংকগুলিকে সমাজের দুর্বল অংশ এবং স্ব-কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ঋণ দিতে হয়।  যাতে বেকারত্ব দ্রুত হ্রাস পায়।  সুতরাং ব্যাংকারকে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই আমানত সংগ্রহ ও ঋণ প্রদান করতে হবে।  তাই ব্যাংকারকে হতে হবে একজন মানব প্রকৃতির বিচারক এবং ঋণ গ্রহীতাদের সাথে তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ বজায় রাখতেও তাকে প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে ধার করা অর্থের কোনো অপব্যবহার না হয় এবং ঝুঁকি সর্বদা সর্বনিম্নে থাকে।
একজন ব্যাংকারকে আরও একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে যা ব্যাংক কর্মচারীদের ইউনিয়ন থেকে আসে।  এই ইউনিয়নগুলি আজকাল প্রচণ্ড শক্তিশালী এবং ব্যাংক ম্যানেজার তাদের শক্তির সামনে অসহায় থাকে।  তাই কর্মচারীদের নিয়মানুবর্তিতা রক্ষা করা একজন ব্যাংকারের পক্ষে কঠিন।  কর্মচারীরা তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক অপশক্তি এবং ব্যাংকারের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন, তাই তারা কখনোই গ্রাহকের সেবা করার মানসিকতা নিয়ে অফিসে আসে না বা কাজ করে না।  এমনকি পিক আওয়ারের সময়ও তাদের আসনে থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে না।  কর্মচারীর অনুপস্থিতির জন্য গ্রাহকদের প্রচুর অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয় এবং গ্রাহককে জবাবদিহি করতে হয় একজন ব্যাংকারকেই।  যদি ব্যাংকার হস্তক্ষেপ করে এবং কর্মচারীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করার চেষ্টা করে, তখন কর্মচারী তাদের যেটা স্বভাব; হুংকার ও চিৎকার-চেচামেচি করে, ব্যাংকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় এবং ইউনিয়নের নেতারা বিষয়টি আরো জটিল করে তোলে।  এ জাতীয় পরিস্থিতি একজন ব্যাংকারকে অবশ্যই দুর্দান্ত কৌশলের সাথে পরিচালনা করতে হবে।  এসব ক্ষেত্রে একটি সামান্য ভুল পদক্ষেপ অন্তহীন ঝামেলার দিকে পরিচালিত করে এবং ব্যাংকারদের জন্য লাঞ্ছনা এনে দেয়।  এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় পরিচালনা পর্ষদও ব্যাংকারদের পক্ষ নেয় না।  তাই ব্যাংকারদেরও সংগঠিত হওয়া উচিত।  যদি ব্যাংকাররা সংগঠিত হতে না পারে তবে এক্ষেত্রে ব্যাংকারের সামনে একটি দিকই খোলা থাকে, তা হলো নিজের বিবেককে জবাবদিহি করা তার পক্ষে সহজ হয়।
ব্যাংকারদের সম্পর্কে ওপরের দিকটি ছাড়াও আরেকটি দিকও রয়েছে।  বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকের ব্যাংকারদের প্রতি গ্রাহকদের মনোভাব খুবই হতাশাজনক।  এই দিকটায় এখন ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকে অধিক মনযোগ দেয়ার সময় এসেছে।
বাংলাদেশ এখনো গ্রাম কেন্দ্রিক।  কিন্তু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে যে, ব্যাংকগুলো তাদের অফিস শহরেই রাখতে পছন্দ করে।  তাই দেশের সব মানুষকে এখনো ব্যাংকিং সুবিধার মধ্যে আনা সম্ভব হয়নি।  এতে করে দেশে বিশেষ করে গ্রামের মানুষ নন-ব্যাংকিং সিস্টেমে অর্থ লেনদেন করে প্রতারিত হচ্ছেন।  যদিও এই ক্ষত মেরামতের প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করেছে।  তবে সেসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে পারেনি।  এর বড় কারণ হিসেবে উঠে আসছে এজেন্ট ব্যাংকিং এর কর্মীরা ব্যাংকের স্থায়ী কর্মী না, ফলে সাধারণ মানুষ এদের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারছে না।
ব্যাংকারদের সবচাইতে বড় সম্পদ হচ্ছে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা।  বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ব্যাংকাররা এক্ষেত্রে সবচাইতে সফল।  যদিও কিছু অর্থনৈতিক দুর্নীতির কাণ্ডে ব্যাংকারদের ভূমিকা আছে বলে প্রমান হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো ব্যাংকারদের বিশ্বাসযোগ্যতা সবচাইতে বেশি।  ব্যাংকারা এই বিশ্বাস অর্জন করেছেন তাদের কাজের মাধ্যমেই, কোনো ঐশী ক্ষমতায় নয়।  আমার দৃষ্টিতে ব্যাংকারদের কাজ হলো যুদ্ধ ক্ষেত্রের সৈনিকের মত গুরুত্বপূর্ণ।  সৈনিক এক মুহুর্ত অন্যমনষ্ক হলে যেমন চরম বিপর্যয় ঘটতে পারে, ব্যাংকাররা তাদের মনযোগ অন্যদিকে নিলেই তাদের প্রতি মানুষের আস্থা হ্রাস পাবে।  যা প্রকারান্তরে ব্যাংকারের জন্য চরম বিপর্যয়েরই।
বর্তমান সময়ে ব্যাংক এবং ব্যাংকারকে ব্যাংকিং কার্য ছাড়াও আরো কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয় কোনো রকম প্রতিদান ছাড়াই।  সরকারের সব ধরনের সামাজিক নিরাপত্তামূলক অর্থ ব্যাংক প্রদান করে, সকল প্রকার ইউটিলিটি বিল গ্রহন করে এবং সময়ে সময়ে নির্দেশিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতে হয়।  এতসব দায়িত্ব হাসিমুখে সামলানো একজন মানুষের পক্ষে খুবই কঠিন।  এই কঠিন কাজটিই ব্যাংকাররা অতি সহজে সম্পাদন করে সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করেছেন।

লেখক- প্রশান্ত কুমার সাহা(রাইট)

সহকারী অধ্যাপক, ব্যবস্থাপনা বিভাগ,সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ,ফরিদপুর।

পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও পোস্ট
©2019 to till today at bankersdarpon.com, All rights reserved.
Site Customized By NewsTech.Com