খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারি ব্যাংকগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ৬১২ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণে এখনো শীর্ষে রয়েছে জনতা ব্যাংক। তবে এ ব্যাংকটি আলোচ্য সময়ে খেলাপি ঋণ আদায়ে অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে তুলনামূলক ভালো করেছে। সরকারি ৬ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও ব্যর্থ হয়েছে চারটি ব্যাংক।
১২ নভেম্বর ২০১৯ (মঙ্গল বার) অর্থ মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পারফরম্যান্স মূল্যায়নে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সার্বিকভাবে এসব সূচকে ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স ‘সন্তোষজনক নয়’ বলে মন্তব্য করেছে মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ব্যাংকগুলোকে তাগিদ দেয়া হয়েছে বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যেন তারা খেলাপি ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয়।
বিভিন্ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অর্থবছরের তিন মাসে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ১০০০ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়ে আদায় করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ১৮৯ কোটি টাকা। অর্জনের হার ১৯ শতাংশ। একইভাবে আলোচ্য সময়ে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০ কোটি টাকা। আদায় করা গেছে ২৬৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অর্জনের হার ৩৩ শতাংশ।
অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০০ কোটি টাকা। আদায় করা গেছে ৫৮ কোটি টাকা (১৫%)। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় করার পরিকল্পনা ছিল ২৫০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩৭ কোটি টাকা (১৫%)। বেসিক ব্যাংকের খেলাপি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫৫ কোটি টাকা। আদায় করা গেছে ৪৩ কোটি টাকা (২৭%)।
এই ব্যাংকগুলোকে ত্রৈমাসিক হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার ২৫ ভাগ খেলাপি ঋণ আদায়ের কথা ছিল। এর মধ্যে একমাত্র জনতা ব্যাংক তা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে চলতি অর্থবছরে ৩ হাজার ১০৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর ব্যর্থতার কারণে এবার খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংককে যে মোট ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে তার মধ্যে শ্রেণিকৃত ঋণ থেকে ২ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা এবং অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ থেকে ৪০২ কোটি টাকা আদায় করতে হবে।
ব্যাংকগুলোর সাথে পৃথকভাবে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’র আওতায় এ পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
Leave a Reply