অগ্রণী ব্যাংক লি: এর ডিজিএম মোঃ জালাল উদদীন মাহমুদ এর ‘রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন’ বই হিসেবে আত্মপ্রকাশ পেয়েছে। বইটিতে তিনি তাঁর ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা ফুটিয়ে তুলেছেন সুচারুভাবে। বইটি পড়ে রিভিউ লিখেছেন অগ্রণী ব্যাংকার মোঃ নাজমুল হুদা রবিন।
জালাল স্যারের ‘রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন (১ম খন্ড)’ বইটি পড়ে মনে হলো জীবনটা গল্পের মত; তবে যে গল্প মানুষকে সুন্দরভাবে বাঁচতে পথ দেখায়।
১. খুব ভালো লেগেছে জালাল স্যার ও রফিক সাহেবের তৈরি প্রত্যয়নপত্র যাতে ম্যানেজার তার নিজের মৃত্যু সনদে সাইন করেছিলেন। এটা আমাদের জন্য খুব শিক্ষণীয় একটা বিষয়। কারণ আমরা অনেকেই সাব অর্ডিনেট এর তৈরি করা ভাউচার ভালোভাবে পরীক্ষা না করেই কাউন্টার সাইন করি- এতে আমরা বড় ধরনের বিপদে পড়তে পারি। তবে এটাও ঠিক, এই আস্থার জায়গা আছে বলেই আমরা অনেক সুন্দর ও ভালো কাজ গুলো সহজে সম্পাদন করতে পারি।
২. আরো ভালো লেগেছে আমিনুর আর সাইকেলের বিষয়টা। আমিনুরের মতো সহজ ও অনুগত চরিত্রের মানুষ আছে বলেই আমাদের অনেকের যাপিত জীবন হয় সুন্দর।
৩. তালোড়া শাখায় মাত্র একটি ক্যালকুলেটর থাকায় ম্যানেজারের যে আক্ষেপ- “জোনাল হেড যদি তার শাখায় ২টি ক্যালকুলেটর দিত- তবে জীবন অন্যরকম হতে পারতো”। এমন আক্ষেপ আমাদের এখন না থাকলেও কাজ করার প্রতি যে আন্তরিকতা- তার বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যায়। এমন বাস্তবধর্মী অনেক জীবন্ত গল্প স্যারের এই বইটিকে সরস করেছে।
৪. রফিক সাহেবের ভাষা শিক্ষার আসরটা যে তৎকালীন নিরস ব্যাংকিং জীবনটাকে খানিকক্ষণের জন্য মধুময় করে তুলেছিল- স্যারের বইটি না পড়লে বোঝা যেত না। তামিল ভাষা ” উকড়ি”, “ফোকা কূ” সহ অনেক শব্দ বইটি কে সমৃদ্ধ করেছে।
৫. জালাল স্যারের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখানোর জন্য তার খালার যে প্রাণান্তকর চেষ্টা- মেয়ের চেয়ে মেয়ের খালাকে গুরুত্ব দেওয়া, মেয়ের রুচিশীল পোশাক পরা, পরবর্তীতে ওই মেয়ের সাথে স্যারের বিয়ে না হওয়া, অনেক বছর পর স্যারের সাথে ওই মেয়ের আকস্মিক দেখা হওয়া- খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বইটিতে, যা রবীন্দ্রনাথের হঠাৎ দেখা কবিতার সারমর্মের মত।
৬. ভিসিআর, সিনেমা চরিত্রের অনেক তথ্য আছে এই বইটিতে। সিনেমার সেকাল আর একাল এর মধ্যে যে ফারাক, আর সমাজ ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তন বিনোদনের মাধ্যমে ফুটে ওঠে- যা নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের মতো হয়ে থাকবে।
৭. তরুণ বয়সে অনেকের মত স্যার নিজেকে নায়ক ভাবতেন। স্বপ্ন দেখা, করোতোয়া নদী, আলতাফ আলী সুপার মার্কেট এ বিষয়গুলো এত সময় এভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে মনে রয়েছে এই সবই প্রত্যেকটি মানুষের জীবনকে পরতে পরতে সমৃদ্ধ করার জন্য জরুরী।
৮. ভাল লাগল স্যার ডিপ্লোমা পরীক্ষার বিষয়টি এনেছেন চমৎকারভাবে। তবে ডিপ্লোমা পরীক্ষায় আগের চেয়ে অনেক কম অসদুপায় অবলম্বন করে এ কালের ছেলেরা- স্যারের উপস্থাপনায় এই বিষয়টা সুস্পষ্ট হয়েছে।
৯. হাবিবের ঘুম নিয়ে স্যারের তথ্য থেকে ঘুম সম্পর্কিত অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছি বইটি পড়ে।
১০. ‘জগৎশেঠ’ যে কারো নাম হয় না বইটি পড়ে আমি প্রথমবারের মতো জানলাম। ‘জগৎশেঠ’ মানে বিশ্ব ব্যাংক- জেনে খুব ভালো লাগলো। জৈনধর্ম, মারোয়ারি সহ অনেক তথ্য সমৃদ্ধ এই বইটি সকলের কাছে সমাদৃত হবে এ বিশ্বাস আমার। ব্যাংকার হিসেবে বইটি তো আমরা পড়তেই পারি, কিন্তু সর্বোপরি এতো তথ্যসমৃদ্ধ বই খুব কম হয়। বইটিতে একদিকে প্রচুর রসবোধ, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় তথ্য; আর বাস্তব অভিজ্ঞতা- যা আমাদের জীবনকে আরো মানবিক, উদার, সহনশীল, সদয় ও বাস্তবধর্মী করতে কাজে লাগবে।
বইটির উত্তরোত্তর কাটতি ও বহুল প্রচারণা পাক- এই কামনা করছি।
Leave a Reply