1. jasemruman@gmail.com : Mohammad Jasemuddin : Mohammad Jasemuddin
  2. bankersdorpon@gmail.com : Anis Munshi : Anis Munshi
  3. azizulhoquedc330@gmail.com : Azizul Hoque : Azizul Hoque
  4. anis.buet2009@gmail.com : superadmin :
  5. shamimbasic2012@gmail.com : Munshi Mohammad Shamim Ahmed : Munshi Mohammad Shamim Ahmed
  6. abusolaiman1984@gmail.com : Abu Solaiman : Abu Solaiman
  7. ferdauszinnat@gmail.com : Zinnat Ferdaus : Zinnat Ferdaus

ব্যাংকিং ইতিহাসের আদ্যপ্রান্ত

  • আপডেট টাইম : Tuesday, October 29, 2019
  • 811 বার পঠিত

ইতিহাসের বাঁকগুলো অনেকক্ষেত্রেই দুর্ভেদ্য-রহস্যাবৃত এবং অমীমাংসিত। হবেই বা না কেনো, মানবের ইতিহাস কি আর দু-এক দিনের? লক্ষ-লক্ষ বছরের! মানুষ্য সমাজে সভ্যতার ছোঁয়া লেগেছে তাও প্রায় ৬০০০ বছর পূর্বে। অথচ ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বাহক ‘কাগজ’ আবিষ্কার হলো মাত্র সেদিন, খ্রীষ্টপূর্ব ১০০ অব্দের দিকে! সংগতকারনেই, ইতিহাসের বাঁকগুলো কখনো শেকড় খুঁজে পেয়েছে, কখনো পায় নি। আজ আমরা যে ‘ব্যাংকিং’ পেশার সাথে জীবন বেঁধে ফেলেছি, সেটার শেকড়ও কি আমরা খুঁজে পেয়েছি? কোথায়, কিভাবে শুরু হলো বর্তমান বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি ‘ব্যাংকিং’ এর?

কথিত আছে, রেনেসাঁ যুগে ইটালির লোম্বার্ডী (Lombardy) নামক স্থানে একটি বাজার ছিলো। সেখানে ইহুদী ব্যবস্যায়ীগণ লম্বা বেঞ্চ পেতে টাকা পয়সার লেনদেন করতেন। যে বেঞ্চের উপরিভাগ ঢাকা থাকতো সবুজ টেবিলক্লথ দিয়ে। এ-বেঞ্চকে ইটালীয় ভাষায় বলা হতো ‘ব্যাংকো (Banco)’। আঞ্চলিক ভাষায় টাকা-পয়সা লেনদেনের এই বেঞ্চকে ব্যাংকা, ব্যাংকাছ ইত্যাদি নামেও অভিহিত করা হতো। ধারনা করা হয় সর্বাধিক প্রচলিত ‘ব্যাংকো’ শব্দ থেকেই ‘ব্যাংক’ শব্দটি অর্থনীতির অভিধানে কালক্রমে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

বর্তমান অর্থনীতিতে ‘ব্যাংক’ বলতে এক ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বুঝায়। এখানে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় সংগ্রহ করে পুঁজি গড়ে তোলা হয় এবং সেই পুঁজি উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়। উদ্দ্যোগতারা সেই ঋণ গ্রহন করে সেটা বিনিয়োগ করেন এবং অর্জিত লভ্যাংশ হতে নির্দিষ্ট সময় বা মেয়াদান্তে ঋণকৃত অর্থের উপর সুদ বা মুনাফা প্রদান করে থাকেন। মুনাফার এই টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে সাধারণ সঞ্চয়কারীর হাতে পৌঁছে তার প্রাপ্য লাভ হিসেবে। এভাবেই ব্যাংক বিশ্ব অর্থনীতির প্রধানতম চালিকা শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে যুগের পর যুগ! যদিও ধারনা করা হয় আধুনিক ব্যাংকিং এর উন্মেষ ঘটে মধ্যযুগে রেনেসাঁর শুরুতে। এখানে স্বভাবতই একটি প্রশ্ন এসে যায়, প্রাচীন ব্যাংকিং এর শুরুটা তবে কবে?

সেই খ্রীস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ হতে ৪০০ সাল পর্যন্ত প্রাচীন সিন্ধু, ব্যাবিলন, রোমান, গ্রীক ও চৌনিক সভ্যতায় ব্যাংকের অস্তিত্বের ইতিহাস পাওয়া গিয়েছে। ভাবা যায়? এছাড়া খ্রীস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রীক ও মিশরীয় সভ্যতায়ও ব্যাংকিং কার্যাবলীর যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। প্রচীনকালে অর্থনৈতিক বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের ধাতব মুদ্রা ব্যবহার করা হতো। কিন্তু মাঝেমধ্যেই তা বহন করা বা সংরক্ষন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যেতো। প্রাচীনকালে বার্টার পদ্ধতি বা পণ্য বিনিময় প্রথায় মূল্যমান বিবেচনায় এক গাদা তাম্র মুদ্রা অল্প কিছু স্বর্ণ মুদ্রায় যদিওবা খুব সহজেই পরিবর্তন করা গেলো, তবুও সমস্যা রয়েই গেলো। এই মূল্যবান মুদ্রাগুলো যদি খুব ভালো ভাবে লুকিয়ে রাখা না হয় বা সুরক্ষিত না থাকে তবে তা চুরি হয়ে যেতে পারে। সভ্যতার শুরুতে মানুষ মন্দিরগুলোকে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচনা করতো। কারণ, মন্দিরের অবকাঠামোগুলো সাধারণত সাধারণ স্থাপনাগুলো থেকে অনেক উন্নত হতো, এখানে সর্বদা জনসমাগম থাকতো, এবং একটি ধর্মীয় আবহের কারনে এটি চোরকে চুরি থেকে বিরত থাকতে প্ররোচণা দিতো। ইজিপ্ট এবং মেসোপটেমিয়াতে স্বর্ণ নিরাপদ রাখার জন্য এভাবেই মন্দিরের অভ্যন্তরে রাখা হতো। কিন্তু যখন ব্যবসায়িক সম্প্রদায় বা রাষ্ট্রের জরুরীভাবে এই স্বর্ণের প্রয়োজন পড়তো, এটা মন্দিরেই অলসভাবেই পড়ে থাকতো। তখন মানুষ এই সম্পদগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য উপযুক্ত বিনিময় পদ্ধতি খুঁজতে থাকেন। ইতিহাসের সুলুকসন্ধানে দেখা যায়, খ্রীষ্টপূর্ব আঠারো শতকে সম্রাট হাম্বুরাবির সময় ব্যাবিলনে মন্দিরের পুরোহিতরা ঋণ দিতেন এবং ঋণ বিষয়ক হিসাবাদি নথিবদ্ধ ও সংরক্ষণ করতেন। আর, এভাবেই ‘ব্যাংকিং’ ধারনার সৃষ্টি হয়। সে সময় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপসনালয়গুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই ব্যাংক ব্যবসাকে বলা হতো ‘উপসনালয় ব্যাংকিং’।

৪র্থ শতকের দিকে গ্রীসের ব্যাংকিং কর্মকান্ড ছিলো পূর্বের যেকোন সমাজের তুলনায় আরো বেশি সুক্ষ্ণ এবং বৈচিত্রপূর্ন। মন্দির সংশ্লিষ্ট এবং রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিগত পর্যায়ের সাথে সাথে এখানে বেসরকারি উদ্দ্যোগতারাও অর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িয়ে পরেন। তারা পুঁজি গ্রহন করেন, ঋণ দেন, অর্থ এক মুদ্রা থেকে অন্য মুদ্রায় রুপান্তর করে্ন এবং মুদ্রার ওজন ও খাদ নির্নয় শুরু করেন। এমনকি তারা এ-সময় অর্থ লেনদেনের হিসাব সংরক্ষণ বই পরিপালন করাও শুরু করে। ঋণদাতারা দেখতে পেতেন কারা গ্রীসের একটা শহরে ঋণ গ্রহন করবে্ন এবং অন্য আরেকটা শহরে অর্থ জমা দেবেন। এতে করে গ্রাহকদের গাদাগাদা কয়েন এক শহর থেকে কষ্ট করে টেনে অন্য শহরে নিয়ে যাওয়ার দরকার পড়তো না।
গ্রীসে যে ধরনের ব্যাংকিং এর প্রচলন ছিলো তার প্রশাসনিক উৎকর্ষতা ও গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং লেনদেন নিয়মিত করার ক্ষেত্রে রোমকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। এখানে ২য় শতকের দিকে প্রথম একটি ঋণ অফিসিয়াল পদ্ধতি অনুসরণ করে বিতরণ করা হয়, যেখানে কিছু জামানতও রাখা হয় এবং লেনদেনের হিসাবাদি সংরক্ষণের জন্য একজন দলিল লেখকও নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু রোমান সম্রাজ্যের পতনের পরপরই ব্যাংকারদের গুরুত্ব কমে যায় এবং তাদের প্রতি ক্রিস্টিয়ান চার্চগুলোর নিষ্ঠুর আচরণ এই পতনকে আরো ত্বরান্বিত করে। কারণ, এই ক্রিস্টিয়ান চার্চগুলো ব্যাংকগুলোর সুদ আরোপের বিষয়টাকে খুব খারাপ ভাবে দেখতো এবং সেসময় তা সামাজিক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে। কিন্তু মানুষের প্রয়োজনকে অস্বীকার করে একেবারে থেমেও যায়নি এই ব্যাংকিং কার্যক্রম!

প্রাচীনকালে বিভিন্ন সভ্যতায় যে ব্যাংকিং প্রথা চালু ছিলো তার প্রমাণ হিসেবে গন্য করা হয় ‘শান্সী ব্যাংক’কে। যা খ্রীস্টপূর্ব ৬০০ অব্দেই প্রতিষ্ঠিত হয় চীনে। ইতিহাসে ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যযুগ বিবেচনা করা হয় ৪০০ সাল হতে ১৪০০ সাল পর্যন্ত সময়কালকে। এ-সময়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এসময় ইটালীয় প্রজাতন্ত্রগুলো ব্যবসা-বানিজ্যে বেশ অগ্রগতি সাধন করে। ব্যাবসায়িক লেনদেনের প্রয়োজনে খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীতে ইতালির রোম শহরে ইহুদী ব্যবসায়ী ও মহাজনগণ যৌথ উদ্দ্যোগে এখানে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রবর্তন করে। ভেনিস সরকারের প্রচেষ্টায় ১১৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ব্যাংক অব ভেনিস’। এটিই বিশ্বের প্রথম সাংগঠনিক ব্যাংক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ব্যাংকের ইতিহাসে আধুনিক যুগের সুচনা হয় ১৪০০ সালে। ১৪০১ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ব্যাংক অব বার্সিলোনা’ কে বিবেচনা করা হয়ে থাকে বিশ্বের সর্বপ্রথম আধুনিক ব্যাংক হিসেবে। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর ব্যাংকের কার্যাবলী আরোও সূক্ষ্ণ ও বিস্তৃত হতে থাকে। ১৬৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ব্যাংক অব সুইডেন’ বিশ্বের প্রথম সনদপ্রাপ্ত বাণ্যিজ্যিক ব্যাংক। এদিকে ১৬৯৪ সালে প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’। সুইডেনের সেভরিজেস রিক্সব্যাংকের পর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং একই সাথে বিশ্বের ৮ম প্রাচীন ব্যাংক। ইতালির ‘মন্টে ডেই পাসচি ডি সিয়েনা’ ব্যাংককে বিবেচনা করা হয়ে থাকে পৃথিবীর প্রচীনতম ব্যাংক হিসেবে। ১৪৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ব্যাংকটি আজও ইতালির তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে তার আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করে আসছে।
[তথ্যসূত্রঃ www.historyworld.net, Wikipedia এবং অন্যান্য]
সুজন প্রামানিক,প্রিন্সিপাল অফিসার ,সোনালী ব্যাংক লিমিটেড

পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও পোস্ট
©2019 to till today at bankersdarpon.com, All rights reserved.
Site Customized By NewsTech.Com